Blogger templates

*****পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষায় আপনার অধিকার*****



মানুষের জীবনে পরিবার হল একটি অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান। নারী, পুরুষ ও শিশু বা কিশোর-কিশোরীরা হল পরিবারে সদস্য । বর্তমান সমাজ ব্যবস্তায় দেখা যায় কোন কোন পরিবারে বিশেষ করে নারী, শিশু বা কিশোর-কিশোরীরা যেমন তাদের বিভিন্ন ন্যায্য অধিকার থেকে  বঞ্চিত হচেছ তেমনি প্রতি দিন কোন না কোন নারী, শিশু বা কিশোর-কিশোরী কম বেশি পারিবারিক নির্যাতনেরও শিকার হচেছ।



১৯৭৯ সালে জাতিসংঘ নারীর প্রতি “সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ” ঘোষণা করে এবং ১৯৮৯ সালে “শিশু অধিকার সনদ” ঘোষণা করে। বাংলাদেশ এসব সনদে স্বাক্ষর করে। তাছাড়া আমাদের সংবিধানে নারী ও শিশুদের সম অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বীকৃতিও দেওয়া হয়েছে। এসবের ধারাবাহিকতাই আমাদের দেশে “পারিবারিক সহিংসতা(প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন,২০১০” নামে একটি আইন প্রণয়ন করা হয়। নিচে এই আইনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরা হলঃ

এই আইন অনুযায়ী পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে এমন নারী বা শিশু সদস্যের উপর কোন প্রকার শারীরিক,মানসিক ও যৌন নির্যাতন করা যাবে না এবং তাদের আর্থিক ক্ষতি থেকে সুরক্ষাও নিশ্চিত করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট আইনের মাধ্যমে।

এই ক্ষেত্রে পারিবারিক সম্পর্ক বলতে রক্তের সম্পর্কের কারণে বা বিয়ের মাধ্যমে বা দত্তকের মাধ্যমে বা যৌথ পরিবারের সদস্য হবার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত কোন সম্পর্ককে বুঝাবে।

শারীরিক নির্যাতন বলতে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির প্রতি (এমন কোন শিশু বা নারী যিনি পারিবারিক সম্পর্ক থাকার কারণে পরিবারের অন্য কোন সদস্য দ্বারা পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন বা হচ্ছেন বা সহিংসতার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন) এমন কোন কাজ বা আচরণ করাকে বুঝাবে, যার দ্বারা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির জীবন,স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা বা শরীরের কোন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।  সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে অপরাধমূলক কাজ করতে বাধ্য করা বা প্ররোচনা প্রদান করা বা বলপ্রয়োগ করাও শারীরিক নির্যাতনের অন্তর্ভুক্ত হবে।

মানসিক নির্যাতন বলতে মৌখিক নির্যাতন,অপমান,অবজ্ঞা,ভীতি প্রদর্শন বা এমন কোন উক্তি করা যার দ্বারা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয় বা হয়রানি করা হয় অথবা তার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ঘটে অর্থাৎ তার স্বাভাবিক চলাচল, যোগাযোগ বা ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা মতামত প্রকাশের উপর হস্তক্ষেপ করাকে বুঝাবে।

যৌন নির্যাতন বলতে যৌন প্রকৃতির এমন আচরণ যার দ্বারা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সম্ভ্রম,সম্মান বা সুনামের ক্ষতি হয়।

আর্থিক ক্ষতি বলতে আইন বা প্রথা অনুসারে বা কোন আদালত বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কতৃর্ক প্রদত্ত আদেশ অনুযায়ী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যে সকল আর্থিক সুযোগ-সুবিধা,সম্পদ বা সম্পত্তি পাওয়ার অধিকারী তা হতে তাকে বঞ্চিত করা অথবা তার উপর তার বৈধ অধিকার প্রয়োগে বাধা প্রদান, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র প্রদান না করা, বিয়ের সময় প্রাপ্ত উপহার বা স্ত্রীধন(হিন্দু আইন অনুযায়ী) বা অন্য কোন দান বা উপহার হিসাবে প্রাপ্ত কোন সম্পদ হতে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা বা এর উপর তার বৈধ অধিকার প্রয়োগে বাধা প্রদান করা।

তাছাড়া সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির মালিকানাধীন যেকোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি তার অনুমতি ছাড়া হস্তান্তর করা বা এর উপর তার বৈধ অধিকার প্রয়োগে বাধা প্রদান করা অথবা পারিবারিক সম্পর্কের কারণে যে সকল সম্পদ বা সুযোগ-সুবিধাদিতে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির ব্যবহার বা ভোগদখলের অধিকার রয়েছে তা হতে তাকে বঞ্চিত করা বা এর উপর তার বৈধ অধিকার প্রয়োগে বাধা প্রদান করাও আর্থিক ক্ষতির  অন্তর্ভুক্ত হবে।

এই আইন অনুযায়ী যদি কোন পুলিশ অফিসার পারিবারিক সহিংসতার খবর পান তাহলে তিনি সহিংসতার শিকার ব্যাক্তিকে এই আইন অনুযায়ী প্রতিকার পাবার অধিকার, চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির সুযোগ, প্রয়োগকারী কর্মকর্তার নিকট হতে সেবা প্রাপ্তির সুযোগ, আইনগত সহায়তা প্রদান আইন,২০০০(২০০০ সনের ৬ নং আইন) অনুসারে বিনা খরচে আইনগত পরামর্শ ও সহায়তা প্রাপ্তি বা অন্য কোন আইন অনুসারে প্রতিকার প্রাপ্তির উপায় ইত্যাদি বিষয়ে সহায়তা করবেন।

সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি প্রতিকার লাভের জন্য আদালতে আবেদন করে কোন সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত আবাসিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান অথবা আশ্রয় কেন্দ্রে যেখানে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি নিরাপদে সাময়িক সময়ের জন্য অবস্থান করতে পারেন সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাধ্যমে আশ্রয় নিতে পারেন।

সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নিজে বা তাহার পক্ষে কোন পুলিশ অফিসার, প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, সেবা প্রদানকারী বা অন্য কোন ব্যক্তির অনুরোধের মাধ্যমে হাসপাতাল, ক্লিনিক বা চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থেকে সেবা পেতে পারেন।

সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নিজে বা তাহার পক্ষে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বা সরকার কতৃর্ক নিযুক্ত কোন কর্মকর্তা বা অন্য কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীন প্রতিকার পাবার জন্য আদালতে আবেদন করলে, আদালত নির্ধারিত নিয়মে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে সুরক্ষায় প্রদান বা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করে দিবেন।

এই আইনের অধীনে সংগঠিত কোন অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য, ও আপোষযোগ্য। কেউ এসব সুরক্ষা আদেশ বা এর কোন শর্ত লঙ্ঘন করলে তা অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে এবং এ জন্য তিনি অনধিক ৬(ছয়) মাস কারাদন্ড বা অনধিক ১০(দশ) হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন এবং অপরাধ পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে তিনি অনধিক ২(দুই) বৎসর কারাদন্ড বা ১(এক) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।

এছাড়া আদালত উপযুক্ত মনে করলে কোন অপরাধীকে এসব শাস্তি প্রদান না করে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিভিন্ন ধরণের সমাজকল্যাণমূলক কাজে সেবা প্রদানের জন্য আদেশ দিতে পারবেন এবং এ ধরেনের সেবা প্রদানের বিষয়টি তত্ত্বাবধানের জন্য যে কোন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে দায়িত্ব প্রদান করতে পারেন।

তবে কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে কেউ এই আইনের অধীনে কোন মিথ্যা মামলা করলে তিনি অনধিক ১(এক) বৎসর কারাদন্ড অথবা অনধিক ৫০(পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।

কিন্তু দীর্ঘ দিন হয়ে গেল এ আইনটি পাস হয়েছে অথচ ভুক্তভোগীরা এখনো সহজে এ আইনের সুফল ভোগ করতে পারছে না। মামলা দায়ের করতে গেলে বা পুলিশের সহযোগিতা নিতে গেলে ভুক্তভোগীদের পদে পদে নানারকম হয়রানির শিকার হতে হয়। আইন থাকলেও পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে জন্য আমাদের সকলকে সচেতনতা সৃষ্টি করে যেতে হবে, সেই সাথে পরিবারে নিজের অধিকারগুলো কি তাও জানাতে হবে। তবেই অনেকাংশে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

লেখক: শিক্ষার্থি আইন বিভাগ, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও মানবাধিকার কর্মী
Share this article :
WELCOME to my 1st Bangla blog site. We can give all Exclusive news as soon as possible.

BREAKINGN NEWS

 
Helped By : WWW.KASPERWINDOW.TK | KasperWindowTemplate | Download This Template
Copyright © 2011. All INFO Zone - All Rights Reserved
Template Created by Aehtasham Aumee Published by KasperWindow
Proudly powered by Blogger